যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টিয়াল মডেল বনাম 🇧🇩 বাংলাদেশের পার্লামেন্টারি দুর্বলতা

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টিয়াল মডেল বনাম 🇧🇩 বাংলাদেশের পার্লামেন্টারি দুর্বলতা

🧭 ভূমিকা:

দুইটি ভিন্নধর্মী রাজনৈতিক কাঠামো—একটি প্রেসিডেন্টিয়াল (যুক্তরাষ্ট্র), অপরটি পার্লামেন্টারি (বাংলাদেশ)।
প্রশ্ন হলো, কোনটি বেশি কার্যকর জনস্বার্থ, জবাবদিহিতা এবং নেতৃত্ব গঠনে?
এই আলোচনায় দেখা হবে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে প্রেসিডেন্টিয়াল মডেল দিয়ে নেতৃত্বে ভারসাম্য আনে, আর বাংলাদেশ কীভাবে নিজস্ব পার্লামেন্টারি কাঠামোর দুর্বলতায় উন্নয়নে ব্যর্থ হয়।


🏛️ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টিয়াল মডেল: মূল শক্তি ও উপকারিতা

1️⃣ ক্ষমতার পৃথকীকরণ (Separation of Powers):

যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট, কংগ্রেস এবং বিচার বিভাগ—এই তিনটি শক্তি পরস্পর স্বাধীন।
👉 একে অপরকে নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য দেয় (Check & Balance)।
✅ এতে স্বৈরতন্ত্র বা একক সিদ্ধান্তের সম্ভাবনা কমে যায়।


2️⃣ নির্বাচিত নির্বাহী নেতৃত্ব:

প্রেসিডেন্ট সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হন। দলীয় নয়, জাতীয় নেতৃত্বের প্রতিচ্ছবি হন।
👉 ফলে নেতৃত্বে থাকে গণতান্ত্রিক বৈধতা ও শক্তিশালী দায়বদ্ধতা।


3️⃣ ক্যাবিনেটে বিশেষজ্ঞ নিয়োগের সুযোগ:

প্রেসিডেন্ট মন্ত্রীদের (Secretary) নিয়োগ দেন প্রয়োজন অনুযায়ী—প্রয়োজন হলে কোনো রাজনীতিবিদ নয়, একজন দক্ষ টেকনোক্র্যাটও মন্ত্রী হতে পারেন।
👉 এটা উন্নয়নকামী নেতৃত্ব তৈরির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।


4️⃣ স্থির মেয়াদ ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা:

প্রেসিডেন্ট একবার নির্বাচিত হলে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকেন। সংসদ ভেঙে যাওয়ার ভয় থাকে না।
👉 এতে নীতি ও পরিকল্পনার ধারাবাহিকতা বজায় থাকে।


5️⃣ ব্যক্তিনির্ভর নেতৃত্ব নয়, ইনস্টিটিউশন-নির্ভর শাসন:

যে প্রেসিডেন্টই আসুক না কেন, মার্কিন রাজনৈতিক ব্যবস্থা তাকে নির্দিষ্ট নিয়মের মধ্যে পরিচালিত করে।


🇧🇩 বাংলাদেশের পার্লামেন্টারি দুর্বলতা

1️⃣ একনায়কতন্ত্রের ঝুঁকি:

প্রধানমন্ত্রী সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেই কার্যত সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হয়ে যান। সংসদ নিয়ন্ত্রণ, আইন প্রণয়ন, এমনকি বিচার ব্যবস্থার ওপরও প্রভাব থাকে।
👉 এতে “একদলীয় শাসন” তৈরি হয় গণতন্ত্রের নামে।


2️⃣ দলীয় আনুগত্য বনাম জাতীয় স্বার্থ:

এমপিরা প্রায়ই দলের সিদ্ধান্ত মেনে চলেন, নিজের এলাকার বা জনগণের স্বার্থ নিয়ে মুখ খুলতে ভয় পান।
👉 এতে সুবিধাবাদী রাজনীতি চর্চা হয়।


3️⃣ মন্ত্রিসভায় দক্ষতার ঘাটতি:

মন্ত্রী নির্বাচন হয় শুধুমাত্র সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে—যে কেউ দক্ষ হোক বা না হোক, মন্ত্রী হওয়ার জন্য দলীয় আনুগত্যই মুখ্য।
👉 এতে ব্যর্থতা, কেলেঙ্কারি ও দায়িত্বজ্ঞানহীনতা বাড়ে।


4️⃣ বিরোধী দলের অকার্যকর ভূমিকা:

বাংলাদেশে বিরোধী দল প্রায় অকার্যকর, অনেক সময় সংসদ বর্জন করে। এতে নিরাপদ বিতর্কহীন পরিবেশে সরকার চালানো যায়, যা গণতন্ত্রকে দুর্বল করে।


5️⃣ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার অভাব:

নির্বাচন এলেই অস্থিরতা, হরতাল, সহিংসতা দেখা যায়। কারণ, সরকার পরিবর্তন মানেই সবকিছু ভেঙে ফেলা—এই সংস্কৃতি পঁচে গেছে।


🔄 সমাধান এবং প্রয়োগযোগ্য মডেল

✅ “সেমি-প্রেসিডেন্টিয়াল মডেল” বিবেচনায় আনা:

যেখানে রাষ্ট্রপতি নির্বাহী ক্ষমতায় যুক্ত থাকবেন, কিন্তু সংসদও রয়ে যাবে—এটি ভারসাম্য আনার চেষ্টা হতে পারে।

✅ মন্ত্রিসভায় ২৫% টেকনোক্র্যাট অন্তর্ভুক্তি বাধ্যতামূলক করা

যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও খাতভিত্তিক দক্ষতা দেখে মন্ত্রী বেছে নেওয়ার ব্যবস্থা চালু করা জরুরি।

✅ নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ এবং সংসদীয় কমিটিকে বাস্তবিক স্বাধীনতা দেওয়া

গঠনমূলক বিরোধী দল, শক্তিশালী প্রশ্নোত্তর ও জবাবদিহির সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে।


🧠 উপসংহার:

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টিয়াল মডেল আমাদের শেখায়—নেতৃত্ব মানে জনমতের সরাসরি প্রতিফলন এবং ক্ষমতার ভারসাম্য।
বাংলাদেশ যদি গণতন্ত্রকে অর্থবহ করতে চায়, তবে দলীয় আনুগত্যের বদলে দায়বদ্ধতা, দক্ষতা ও জবাবদিহিমূলক কাঠামো গড়ে তুলতে হবে।

Shopping Cart